গৌতম চন্দ্র বর্মন ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ধামের গানের জনপ্রিয়তা এখনও শীর্ষে রয়েছে। লক্ষী পূজা উপলক্ষে এখন ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া থানার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে চলছে ধামের গানের আসর। গ্রাম্য শিক্ষিত-অশিক্ষিত যুবকদের পরিবেশিত এ ধামের গানের আসরে চলছে উপচে পড়া ভিড়। গান শুনতে পয়সা লাগেনা এবং বর্তমানে গ্রাম্য মানুষের তেমন একটা কাজ কর্ম না থাকায় নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ নাওয়া খাওয়া ভুলে এ আসরে সমবেত হচ্ছে।
রুহিয়া থানার বিভিন্ন গ্রামে এসব ধামের আসর শুরু হয়েছে। প্রতিবছর কার্তিক মাসে লক্ষী পূজার সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এ আসরের আয়োজন করে। প্রতি বছরের ন্যয় এ বছরও গত বৃস্পতিবার থেকে এসব আসর শুরু হয়েছে।
ধামের গানে লোকনাট্য আঙ্গিকের পুরুষ কেন্দ্রিক গান ও অভিনয় পরিবেশিত হলেও গ্রাম বাংলায় এর সমাদরের কমতি নেই। ধামের গান শুরু হওয়ার কথা শুনলেই এ অঞ্চলের মানুষের মনে প্রাণে-চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ধাম অর্থ বারান্দা বা ঘর। উঠোনের মাঝে কিংবা কোন গাছের তলায় উঁচু মাটির ঢিবি তৈরি করে ধামের গানের আসর বসানো হয়। ধামের গান নাট্যপালায় বিভিন্ন চরিত্রে থাকে শিক্ষিত-অশিক্ষিত গ্রাম্য যুবকেরা। আঞ্চলিক ভাষায় কাল্পনিক চরিত্রগুলো রচনা করা হয়। নিজেরাই কখনও পালা তৈরি করে। আবার কখনও কখনও যাত্রা পালার বই থেকে পালা গেয়ে মানুষকে আনন্দ দেয়। ধামের গানের মজার ব্যাপার হলো নারী চরিত্র থাকলেও এখানে পুরুষরাই মহিলাদের কাপড় পড়ে লম্বা চুলের ঝুটি, মাথায় খোপা, নাকে নাকফুল, কানে দুল পরে বিভিন্ন চরিত্রের নারী সেজে অপূর্ব অভিনয় করে গান পরিবেশন করে। তাদের চেনা দায়। ধামের গানে পুরুষ চরিত্রটি যেন এক অপূর্ব সৃষ্টি। পুরুষ চরিত্রটি হাস্য রস্য, কৌতুক, কখনও বা পুরুষ চরিত্রটি গাঁয়ের দুই ছেলে। কখনওবা বখাটে ছেলে। কখনও কখনও উপহাসের পাত্র। এই চরিত্র ঘিরে মঞ্চায়িত হয় মজার মজার কাহিনী। ধামের গানে মূলতঃ শাস্ত্রীয়,পাঁচমিশালী ও যাত্রা পালার ঢংয়ে উপস্থাপন করা হয়।