বোরহান উদ্দিন সাকিব: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আজম নাছির উদ্দীন বলেছেন ধুমপান মানে বিষপান। ধুমপানের কোন উপকারিতা আছে সেটা আজ পর্যন্ত কেউ আবিষ্কার করতে পারে নি। অধিকন্তু ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা ও পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধ, তার পরও যত্রতত্র বিজ্ঞাপন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে তামাকজাত পণ্যের বিক্রি বন্ধে সিটিকর্পোরেশন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে বিক্রি নিষিদ্ধ করা হবে। তবে ধুমপান ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার নিষিদ্ধে জনগনের মাঝে সচেতনতার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা না হলে শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ করে সমাজ থেকে ধুমপান ও তামাক সেবনের মতো সামাজিক ব্যাধি বন্ধ করা যাবে না। তাই সমাজ পরিবর্তনে নিবেদিত ক্যাবসহ অন্যান্য সামাজিক সংগঠন ও গোষ্ঠিগুলিকে এ জনসচেতনতা সৃষ্ঠিতে এগিয়ে আসতে হবে। ৩১ আগষ্ঠ ২০১৯ শনিবার ক্যাম্পইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস’র সহায়তায় পিপলস জুবিল্যান্ট এনগেজমেন্ট ফর টোবাকো ফ্রি চিটাগাং সিটি প্রকল্প, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটির উদ্যোগে জামালখান চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজিত মানববন্ধনে উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
ক্যাব জামালখান ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি সালাহ উদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানব বন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র আজম নাছির উদ্দীন। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটি সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব মহানগরের যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব আকবর শাহ থানার সভাপতি ডাঃ মেসবাহ উদ্দীন তুহিন, বিটার প্রকল্প সমন্বয়কারী প্রদীপ আচায্য, ক্যাব জামালখান ওয়ার্ডের সাধারন সম্পাদক নবুয়ত আরা সিদ্দিকী, ক্যাব হালিশহরের এমদাদুল ইসলাম সৈকত, অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন, মানবাধিকার নেতা এম এ আজিজ, স্বপ্নীল বাংলাদেশ নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আলী, ক্যাব উত্তর জেলার সদস্য সচিব সাহাদত হোসেন, ক্যাব চান্দগাঁও থানার সভাপতি মোঃ জানে আলম, সাধারন সম্পাদক ইসমাইল ফারুকী, ক্যাব পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের সভাপতি অধ্যক্ষ মনিরুজ্জমান, সাধারন সম্পাদক আবু ইউনুচ, ক্যাব দক্ষিন জেলা সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক এস এম শাহনেওয়াজ আলী মির্জা, ক্যাব সদর ঘাটের শাহীন চৌধুরী, উন্নয়ন সংগঠক নজরুল ইসলাম মান্না, নার্গিস চৌধুরী, ক্যাব যুব গ্রুপের নিপা দাস, সালমা আকতার শিলা, মোনায়েম বাপ্পি, আবু ইউসুফ সন্দীপি, নারী নেত্রী সামশুন্নাহার, সবুজের যাত্রার কে এম আলমগীর, নাগরিক নেতা আবদুল মাবুদ আসিফ প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, তামাকমুক্ত চট্টগ্রাম নগরী গড়ে তুলতে এবং তামাকের প্রচারণা ও বিজ্ঞাপন বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে এই মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখার জন্য সর্বত্র ব্যাপক সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ‘পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি তামাক সেবনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এর প্রধান কারণ তামাকজাত দ্রব্যের সহজলভ্যতা, খুচরো সিগারেট ক্রয়-বিক্রয় এবং বিজ্ঞাপন। তামাকের এই সহজলভ্যতার কারণে তরুণরা দিন দিন আসক্ত হয়ে পড়ছে তামাকের দিকে। ২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী তামাক ব্যবহারে প্রতিবছর দেশে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়। যা দেশের বার্ষিক মোট মৃত্যুর ১৯ শতাংশ। দেশের প্রতি পাঁচজনে একজন ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ তামাক ব্যবহার।
মানববন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, ধুমপান মাদক সেবনের প্রথম সোপান। আর নিজেরা ধুমাপায়ী না হলেও পরোক্ষ ধুমপানের কারনেও সমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যার কারণে ক্যান্সার, হ্দরোগ, হাঁপানীর মতো প্রাণঘাতি রোগ মহামারি আকারে বেড়েছে। পাড়া মহল্লায় দোকান, হোটেল- রেস্তোরাঁয় প্রবেশ পথে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মুখে যত্রতত্র তামাকপণ্য বিক্রি, প্রদর্শন, বিভিন্ন উপঢোকন দিয়ে তরুণদের ধূমপানে আকৃষ্ট করে প্রকারান্তরে মাদকাসক্ত করা হচ্ছে। এর ফলে অনেক সম্ভবানাময় তরুণ বিপথে পরিচালিত হয়ে পুরো সমাজকে কলুষিত করছে। তাই তামাক পণ্য বিক্রি ও একাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। তা না হলে তামাক ব্যবসায়ীদের এ ধরনের কার্যক্রম দেশকে মেধাহীন করে তুলবে। সরকার মাদক-ইয়াবার বিরুদ্ধে সরকার শূণ্য সহনশীলতা প্রদর্শন করলেও চাহিদা থাকায় ইয়াবার ব্যবসা বন্ধ করা যাচ্ছে না। আর ধূমপান হলো মাদক সেবন শুরুর প্রথম সোপান।